রমজানে সঠিক খাবার নির্বাচন: স্বাস্থ্যকর ইফতার ও সাহরি - কী খাবেন এবং কী এড়িয়ে চলবেন
রমজান মাসে খাবার নির্বাচনে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি শুধু শরীরের পুষ্টি নয়, রোজার সার্বিক অভিজ্ঞতাকেও প্রভাবিত করে। এই মাসে সঠিক খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখলে শুধু স্বাস্থ্য উপকারিতাই হয় না, রোজার মাসের উদ্দেশ্যও সফলভাবে পালন করা সম্ভব। চলুন জেনে নেয়া যাক, রমজানে কী খাবেন এবং কী এড়িয়ে চলবেন।
ইফতারে কী খাবেন?
ইফতারের সময় শরীরের জন্য সঠিক পুষ্টি সরবরাহ করা জরুরি। দীর্ঘসময় উপবাস থাকার পর খাদ্য গ্রহণ করলে হজমের সমস্যা হতে পারে, তাই পরিমিত এবং সহজপাচ্য খাবার গ্রহণ করা উচিত।
১. খেজুর:রোজা ভাঙার জন্য খেজুর একটি অসাধারণ এবং স্বাস্থ্যকর খাবার। এতে রয়েছে প্রচুর শক্তি এবং
সহজপাচ্য শর্করা, যা দ্রুত শরীরে শক্তি প্রদান করে। এছাড়া খেজুরে রয়েছে অনেক ভিটামিন ও মিনারেল, যা শরীরকে পুনরুজ্জীবিত করে। খেজুরে থাকা পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম হৃদযন্ত্রের কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করতে সহায়তা করে। নিয়মিত খেজুর খাওয়ার ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।এর অসীম স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য, খেজুরকে রোজার আদর্শ খাদ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়।ইসলামী শরিয়তের নির্দেশনা অনুযায়ী, রোজা ভাঙার প্রথম খাবার হিসেবে খেজুর খাওয়া সুন্নত। হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সময় থেকেই এই প্রথা চালু রয়েছে, এবং তিনি প্রতিদিন ইফতার শুরু করার আগে তিনটি খেজুর খেতেন। খেজুর খাওয়ার মাধ্যমে শুধুমাত্র শরীরের উপকার হয় না, এটি একটি ধর্মীয় ইবাদতও বটে। রোজা ভাঙার সময় খেজুর গ্রহণ করা আমাদের শারীরিক ও আত্মিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী এবং সুন্নত অনুসরণের একটি সুন্দর সুযোগ।
২. পানি বা ঘরোয়া শরবত:
ইফতারির শুরুতে পানি বা ঘরোয়া শরবত খাওয়া উচিত। পানির মাধ্যমে শরীর আর্দ্র থাকে এবং শরীরের অতিরিক্ত টক্সিন বের হয়ে যায়। শিরা ও রক্ত সঞ্চালন ভালো রাখতে এই পদ্ধতি খুবই কার্যকর।ইসলামী
শরিয়তে রোজা ভাঙার সময় প্রথম খাবার হিসেবে পানি খাওয়ার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। হজরত মুহাম্মদ
(সা.)-এর সুন্নত অনুসারে, তিনি রোজা ভাঙার পূর্বে তিনটি খেজুর বা পানি দিয়ে শুরু করতেন। এটি শুধু শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্যই উপকারী নয়, বরং এটি একটি ধর্মীয় অনুশীলনও। তাই, সুন্নত অনুসরণ করে ইফতারির শুরুতে পানি বা ঘরোয়া শরবত খাওয়া আমাদের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রণিধানযোগ্য অভ্যাস।
৩. মৌসুমি ফল:
রমজান মাসে মৌসুমি ফল যেমন তরমুজ, আম, এবং পেয়ারা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এই ফলগুলো প্রাকৃতিকভাবে শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে এবং পুষ্টি সরবরাহ করে, যা দীর্ঘ সময় উপবাসের পর শরীরকে দ্রুত পুনরুজ্জীবিত করে।
তরমুজ - প্রাকৃতিক হাইড্রেটর
তরমুজ ৯২% পানি দিয়ে তৈরি, যা শরীরের আর্দ্রতা বজায় রাখে। এটি ভিটামিন সি, পটাসিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পূর্ণ, যা শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং হজমে সহায়তা করে।
আম - পুষ্টির রক্ষক
আমে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ এবং ফাইবার থাকে, যা শক্তি ফিরিয়ে আনে এবং হজমে সাহায্য করে। এটি শরীরের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করে এবং কোষকে সুরক্ষিত রাখে।
পেয়ারা - পুষ্টির উৎস
পেয়ারা ভিটামিন সি এবং ফাইবারের ভাল উৎস, যা হজমে সহায়তা করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি শরীরের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করে।
অন্যান্য মৌসুমি ফল
কলা, আনার, বরই এবং তালের মতো ফল শরীরকে শক্তি দেয় এবং হজম ব্যবস্থাকে সুস্থ রাখে, পাশাপাশি পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে।
এগুলো রোজা ভাঙার পর শরীরের শক্তি ফিরিয়ে আনে এবং স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
৪. প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার:
রমজান মাসে সারাদিন উপবাস থাকার পর শরীরকে শক্তিশালী এবং সতেজ রাখার জন্য ইফতারের পর সঠিক পুষ্টি গ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার শরীরের পুনরুদ্ধার ও শক্তি বজায় রাখতে সহায়তা করে। তবে, সেটা যেন থাকে সঠিক পরিমাণে এবং স্বাস্থ্যকরভাবে। চলুন জানি, ইফতারের পর কীভাবে প্রোটিন গ্রহণ করলে শরীর সুস্থ ও শক্তিশালী থাকবে।
গ্রিলড মাছ বা চিকেন:
গ্রিলড মাছ বা চিকেন প্রোটিনের দারুণ উৎস, যা স্বাদেও চমৎকার। মাছের মধ্যে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড শুধু প্রোটিনই নয়, হৃদযন্ত্রের জন্যও উপকারী। আর চিকেন তো সবসময়ই পছন্দের! ইফতারি শেষে এসব খাবারের মাধ্যমে শরীর প্রয়োজনীয় প্রোটিন পায় এবং শরীরের শক্তি ফিরে আসে।
ডিম:
ডিম যেন একটি সুপারফুড! এটি সহজে হজম হয় এবং প্রোটিনের পাশাপাশি অনেক গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে। একেকটি ডিমে প্রায় ৬ গ্রাম প্রোটিন থাকে, যা শরীরকে শক্তি দেয় এবং পেশী তৈরি করতে সাহায্য করে। ইফতারের পর একটি সেদ্ধ ডিম বা পরাঠার সাথে ডিম খাওয়া খুবই উপকারী।
ডাল:
ডাল একটি দারুণ উদ্ভিজ্জ প্রোটিন উৎস, যা হজমে সহায়ক এবং শরীরকে দ্রুত পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে। লেন্টিল, মুসুর, মুগ ডাল শরীরের জন্য ভালো এবং পেট ভরেও রাখে। ভেজিটেবল সুপ বা ডাল দিয়ে ইফতারের পর একটি সুষম খাবার তৈরি করতে পারেন।
বাদাম:
বাদাম—আখরোট, কাজু, ম্যান্ডেল, পেস্তা—সব ধরনের বাদামেই রয়েছে প্রচুর প্রোটিন এবং ভালো ফ্যাট। এগুলো শরীরকে শক্তি প্রদান করে, ত্বক এবং হৃদযন্ত্রের জন্যও উপকারী। ইফতারের পর একটা মুঠো বাদাম খাওয়া শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
কেন প্রোটিন ইফতারের পর গুরুত্বপূর্ণ?
প্রোটিন শরীরের মেরামত এবং শক্তি ফিরে পাওয়ার জন্য অত্যন্ত জরুরি। ইফতারের পর প্রোটিনযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে পেশী পুনর্গঠন হয় এবং শক্তি বজায় থাকে। এছাড়া, প্রোটিন হজমে সহায়তা করে এবং বিপাকীয় কার্যক্রম সঠিক রাখে, ফলে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত শরীর সতেজ ও শক্তিশালী থাকে।
৫. শাকসবজি:
রমজানে ইফতারি শুধু খাবারের ব্যাপার নয়, এটি যেন এক ধরনের শক্তি পুনরুদ্ধারের কাজ করে। আর এই শক্তি ফিরিয়ে আনতে শাকসবজি খাওয়ার গুরুত্ব অনেক বেশি। শাকসবজি আমাদের শরীরের জন্য দরকারি সব ভিটামিন, মিনারেল এবং ফাইবার সরবরাহ করে, যা শুধু হজমে সাহায্য করে না, বরং শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
শাকসবজির উপকারিতা:
১. ভিটামিন এবং মিনারেল: শাকসবজি যেমন ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম এবং আয়রন দিয়ে ভরপুর থাকে, যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে। এছাড়া, এগুলো আমাদের হাড়, চামড়া এবং চোখের জন্যও উপকারী।
২. ফাইবার: শাকসবজি খেলে হজম সহজ হয়, কারণ এতে প্রচুর ফাইবার থাকে। আর কোষ্ঠকাঠিন্য বা হজমের অন্য কোনো সমস্যা থাকলে শাকসবজি খাওয়ার মাধ্যমে তা সহজেই কমে যায়।
৩. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: শাকসবজিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের টক্সিন দূর করতে এবং সেলকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
শাকসবজি কীভাবে খাবেন?
- আপনি চাইলে শাকসবজি স্যালাড হিসেবে খেতে পারেন, যা তাজা এবং স্বাস্থ্যকর।
- রান্না করতে গেলে, অতিরিক্ত তেল বা মশলা এড়িয়ে স্বাস্থ্যকর উপায়ে রান্না করুন।
শাকসবজি শুধু হজমের জন্যই নয়, শরীরের জন্যও অনেক উপকারী। রোজা ভাঙার পর শরীরকে আবার চাঙ্গা করতে শাকসবজি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। তাই, আপনার ইফতারি যদি সুস্থ রাখতে চান, শাকসবজি যেন থাকে আপনার ডিনারে!
❌❌ইফতার এড়িয়ে চলা খাবার ❌❌
-
ভাজাপোড়া খাবার: ভাজাপোড়া খাবার যেমন পেঁয়াজু, বেগুনি, সিঙ্গারা ইত্যাদি রোজার সময়ে খুবই জনপ্রিয় হলেও, এগুলি নিয়মিত খাওয়ার জন্য সুস্থ শরীরের জন্য উপকারী নয়। এসব খাবার সাধারণত অতিরিক্ত তেল ও মশলায় তৈরি হয়, যা হজমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। দীর্ঘ সময় উপবাসের পর এই ধরনের খাবার হজমের জন্য অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে বদহজম, গ্যাস ও পেটব্যথার সমস্যা হতে পারে।ভাজাপোড়া খাবারে প্রচুর ক্যালোরি থাকে, যা শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমাতে সাহায্য করে এবং অস্বাস্থ্যকর পরিমাণে ফ্যাটের সরবরাহ করে। এই ধরনের খাবার শরীরের সঠিক শক্তি প্রদান না করে, বরং ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। তাছাড়া, এগুলি পেটের জন্য ভারী এবং হজম করতে বেশি সময় নেয়, যার ফলে দ্রুত ক্লান্তি এবং অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে।
কৃত্রিম রঙ ও সুগার: রমজান মাসে ইফতারিতে মিষ্টি এবং বিভিন্ন ধরনের ফাস্ট ফুডের প্রবণতা বাড়ে। তবে, কৃত্রিম রঙ ও অতিরিক্ত সুগারযুক্ত খাবারগুলি শরীরের জন্য বেশ ক্ষতিকর হতে পারে। কৃত্রিম রঙ ও সুগারের উপস্থিতি শুধু স্বাদেই বাড়ায় না, এটি শরীরের জন্য দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। কৃত্রিম রঙ শরীরের টক্সিনের স্তর বাড়াতে সাহায্য করতে পারে এবং অ্যালার্জি বা অন্যান্য ত্বক সংক্রান্ত সমস্যা তৈরি করতে পারে।অতিরিক্ত মিষ্টি খাওয়ার ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণ দ্রুত বেড়ে যায়, যা ইনসুলিনের নিঃসরণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে এবং শরীরের মেটাবলিজমে অসামঞ্জস্যতা তৈরি করতে পারে। দীর্ঘদিন এই ধরনের খাবার খাওয়ার ফলে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে।অতিরিক্ত মিষ্টি এবং কৃত্রিম রঙে তৈরি খাবার থেকে বিরত থাকা উচিত, কারণ এগুলি শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে এবং রক্তে শর্করার পরিমাণ দ্রুত বাড়াতে পারে।
সাহরিতে কী খাবেন?
সাহরি হলো রোজার জন্য শক্তি সংগ্রহের সময়, তাই এই সময়ের খাবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাহরিতে সঠিক খাবার খেলে সারাদিনের জন্য পর্যাপ্ত শক্তি পাওয়া যায় এবং ক্ষুধা বা পিপাসা কম অনুভূত হয়। বিশেষ করে এমন খাবার খাওয়া উচিত যা ধীরে ধীরে হজম হয় এবং দীর্ঘসময় পেট ভরা রাখে, যেমন ওটস, ডাল, ভাত বা রুটি। প্রোটিন এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যেমন ডিম, মুরগির মাংস বা দই শরীরকে শক্তি দেয়। এছাড়া, সাহরির পর পর্যাপ্ত পানি পান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যাতে সারাদিন পানির অভাব না হয় এবং শরীর সুস্থ থাকে।
১. প্রোটিন ও ফাইবার:
যেভাবে দিনের শুরুতে শক্তি সংগ্রহ করবেন, তা সারাদিনের জন্য প্রভাব ফেলবে। সঠিক খাবার খেলে রোজা রাখাটা আরও সহজ এবং আরামদায়ক হয়ে ওঠে। প্রোটিন ও ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যেমন ডিম, দই, মুসুর ডাল, এবং মৌসুমি ফল খাওয়া সাহরিতে অত্যন্ত উপকারী।
১. ডিম: ডিমে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন যা আমাদের শরীরের জন্য খুব দরকারি। প্রোটিন শরীরকে শক্তি দেয় এবং সারাদিন পেট ভরা রাখে। এটি হজম হতে সময় নেয়, তাই দিনের দীর্ঘ সময়ের জন্য শক্তি বজায় থাকে। এছাড়া, ডিমের মধ্যে ভিটামিন এবং মিনারেল থাকে, যা শরীরের সার্বিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
২. দই: দই শুধু খেতে সুস্বাদু নয়, হজমের জন্যও খুব উপকারী। এটি আমাদের পাচনতন্ত্রকে স্বাস্থ্যকর রাখে এবং ভালো ব্যাকটেরিয়ার কাজ বৃদ্ধি করে। দই খাওয়ার ফলে শরীরে ভিটামিন বি১২ এবং ক্যালসিয়াম সরবরাহ হয়, যা শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে।
৩. মুসুর ডাল: মুসুর ডাল প্রোটিন এবং ফাইবারে পূর্ণ, যা পেট ভরা রাখে এবং শক্তি সরবরাহ করে। এর মধ্যে থাকা ফাইবার হজমের প্রক্রিয়াকে সহজ করে এবং পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখে। এছাড়া, মুসুর ডাল দ্রুত হজম হয়, ফলে শরীরে কোনো ভারী অনুভূতি থাকে না।
৪. মৌসুমি ফল: আম, পেয়ারা, তরমুজ, এসব মৌসুমি ফল শরীরকে ভিটামিন, মিনারেল এবং পানি সরবরাহ করে। বিশেষ করে তরমুজের মধ্যে প্রচুর পানি থাকে, যা শরীরকে আর্দ্র রাখতে সহায়তা করে। মৌসুমি ফলগুলো শরীরকে রিফ্রেশ করতে সাহায্য করে এবং হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে, বিশেষত উপবাসের পর।
২. ভাত বা রুটি:
সাহরির সময় এমন খাবার খাওয়া দরকার, যা আমাদের দিনভর শক্তি দেয় এবং দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে। ওটস, লাল চালের ভাত বা রুটি এর মধ্যে অন্যতম। এগুলো সহজে হজম হয় এবং পেট অনেক সময় ধরে ভরা থাকে, যা আপনাকে সারাদিন তাড়াতাড়ি ক্ষুধা অনুভব করতে দেয় না।
ওটস আসলে একটি দারুণ ফাইবার রিচ খাবার, যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এটা ধীরে ধীরে হজম হয়, ফলে তাড়াতাড়ি ক্ষুধা লাগবে না। আর লাল চালের ভাত বা রুটি খেলে শক্তি ধীরে ধীরে মুক্ত হয়, যাতে সারাদিন আপনি তাজা এবং একটানা শক্তি অনুভব করবেন। এই খাবারগুলো খেতে খুবই সুস্বাদু এবং সহজ, তাই রোজার সময়েও এগুলো আপনাকে হালকা এবং সুস্থ রাখবে।
৩. পানি:
সাহরির সময় পানি খাওয়া একদম গুরুত্বপূর্ণ। এটা শরীরকে আর্দ্র রাখে এবং পুরো রোজা রাখার সময় শরীরের কোনো সমস্যা হবে না। পানির অভাব হলে ক্লান্তি, মাথাব্যথা বা অসুস্থতা হতে পারে, তাই হালকা পানির খোঁজ রাখুন।
তবে, চা বা কফি খানিকটা সতর্কতার সঙ্গে খান, কারণ এগুলো শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বের করে দেয়। এক কাপ চা বা কফি হয়তো সমস্যা করবে না, কিন্তু অতিরিক্ত খেলে শরীরে পানির অভাব হতে পারে, যা পরবর্তীতে কষ্টকর হতে পারে। তাই, সবচেয়ে ভালো হলো পানি বা ঘরোয়া শরবত খাওয়া, যা আপনাকে হাইড্রেটেড রাখবে এবং সারাদিন তাজা অনুভব করতে সাহায্য করবে।
❌❌সাহরিতে এড়িয়ে চলা খাবার❌❌
-
অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার:
অতিরিক্ত তেল, মসলাযুক্ত খাবার যেমন ঝাল মাংস, ঝাল স্যুপ, পিকল ইত্যাদি এড়িয়ে চলা উচিত। এগুলো পিপাসা বৃদ্ধি করতে পারে এবং হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে। -
লবণাক্ত খাবার:
সাহরিতে লবণাক্ত খাবার, যেমন চিপস, প্যাকেটজাত খাবার, অতিরিক্ত নোনতা খাবার এড়িয়ে চলুন। এগুলো পিপাসা বাড়িয়ে দেয় এবং সারাদিন পানি পান করার চাহিদা সৃষ্টি করে।
কিছু স্বাস্থ্যকর টিপস:
-
ধীরে ধীরে খাওয়া:
খাবার ধীরে ধীরে চিবিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করুন, এটি হজমে সাহায্য করে এবং খাবারের পরিমাণ বুঝে খাওয়া সম্ভব হয়। -
ফলমূল ও শাকসবজি:
মৌসুমি ফলমূল ও শাকসবজি খেলে শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেল পৌঁছায়, যা শরীরের জন্য উপকারী। -
ভাজাপোড়া কম খান:
ভাজাপোড়া খাবারের থেকে বেশি হালকা ও সহজপাচ্য খাবার নির্বাচন করুন।
রোজার স্বাস্থ্য উপকারিতা:
- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়
- হজমক্রিয়া উন্নত হয় এবং শরীরের টক্সিন বের হয়ে যায়
- শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়
- মানসিক প্রশান্তি এবং ধৈর্য বৃদ্ধি পায়
- হৃদযন্ত্রের কার্যক্রম উন্নত হয়
- রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে
- ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়
- শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাট পোড়াতে সাহায্য করে
- অতিরিক্ত খাবারের প্রতি ক্ষুধা কমে
- ঘুমের গুণগত মান বৃদ্ধি পায়
- শরীরের শক্তি পুনরুদ্ধার হয়
- মানসিক চাপ কমে এবং ফোকাস বাড়ে
- হাড়ের গঠন শক্তিশালী হয়
- হরমোনের ভারসাম্য বজায় থাকে
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
- কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়
- অতিরিক্ত পানি ধরে রাখার সমস্যা কমে
- চর্বির সঞ্চয় কমে এবং বিপাক ত্বরান্বিত হয়
- শরীরের পেশী উন্নত হয়
- ত্বকের অবস্থার উন্নতি ঘটে
- দীর্ঘায়ু বৃদ্ধি পেতে পারে
- আলঝেইমার রোগের ঝুঁকি কমে
- মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়
- রক্তচাপ কমে যায়
- শরীরের আন্ত্রিক পরিবেশ উন্নত হয়
- মনোযোগ এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা বৃদ্ধি পায়
- ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
- হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে
- শরীরের অভ্যন্তরীণ পরিপাকতন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত হয়
রমজান মাসে সঠিক খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করে, সুস্থভাবে রোজা পালন করা সম্ভব। সুষম খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে শরীরকে শক্তিশালী এবং সুস্থ রাখা যাবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url